কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম
দেশজুড়ে শীত জেঁকে বসেছে কয়েক দিন ধরে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দু-এক দিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়া ঘন কুয়াশা থাকবে আরও অন্তত এক সপ্তাহ। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো চট্টগ্রামেও শীতের প্রভাব বাড়ছে। ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
বিশেষ করে চট্টগ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। নগরীর তুলনায় গ্রামাঞ্চলের দিকে মাত্রাটা একটু বেশি এবং পরিস্থিতি নাজুক। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঠান্ডা কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জেলাজুড়ে। নবজাতক, শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। শীতের শুরুতেই পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। হাসপাতালটিতে শয্যার চেয়ে বেশি রোগী হওয়ায় অনেকেই মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তির পরিমাণ আরো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মা–বাবারা বুঝতে পারেন না, তার শিশুর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুর সর্দি–কাশিকে বেশিরভাগ অভিভাবক অবজ্ঞা করেন। পরে এক সময় সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জ্বর–খিচুনি, নিউমোনিয়া আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী শিশুরা।
এ-দিকে রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডে স্থান সংকুলানের অভাবে এক বেডে একাধিক শিশুকেও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া একটি অক্সিজেন সঞ্চালন লাইন থেকে দুই বা ততোধিক শিশুকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। এতে করে যে শিশুর বেশি পরিমাণ অক্সিজেন দরকার তার অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে বেডের সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে ওয়ার্ডে অনুমোদিত বেড রয়েছে ৭৪টি। অথচ গতকাল ভর্তি রোগী ছিল প্রায় ২৯০ জন।
শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, বেড যে পরিমাণই থাকুক, আমরা তো কোনো রোগীকে আর ফেরত দিতে পারি না। রোগীর তুলনায় আমাদের চিকিৎসকেরও কিছুটা সংকট রয়েছে, তবে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি।
এ-ছাড়াও জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে আসা রোগীর অভিভাবকদের বেশির ভাগই রোগীদের নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টের কথা জানিয়েছেন। চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা দেখে ভর্তি করছেন।
আমেনা আক্তার নামে এক রোগী জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মাথাব্যথার সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করেছে। সকালে হাসপাতালে এসে ভর্তি হন তিনি। মূলত অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণেই তাঁর এমনটা হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতালে ভর্তি হলেও শয্যা সংকট থাকায় মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাঁকে।
কদর আলী নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তাঁর সত্তর বছর বয়সী নানিকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছেন। ঠান্ডার কারণে তিনি জ্বরে ভুগছেন। আরেক অভিভাবক রহিমা বেগম জানান, তাঁর নবজাতক সন্তানের ঠান্ডা লেগেছে। জ্বরের সঙ্গে সর্দি দেখা দিয়েছে। তাই তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
এ-নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, তীব্র শীতে শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। তাদের যেন ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের গরম খাবার খাওয়াতে হবে। আর যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায় অবশ্যই হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে।
এ-বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামীম হাসান বলেন, ঠান্ডা বাড়ায় হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নবজাতক ও বৃদ্ধরা বেশি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের কারণে শীতকালে শতকরা ৮০ ভাগ শিশু ভাইরাসজনিত রোগের শিকার হয়। এর মধ্যে ঠাণ্ডা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ যেমন: সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস বা হাঁচি-কাশি এবং ভাইরাস-নিউমোনিয়া সংক্রমণ, অ্যাজমা ও অ্যাটোপিকক্রাইনাটিস বাড়ছে। এছাড়া হালকা জ্বর ও বমিসহ ডায়রিয়া, চিকেনপক্স, মিজেলস, ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত শিশু রোগী আসছে। হাসপাতালে আসা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা এলাকার বাসিন্দা বলেও জানান তিনি।