বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫
সব হোটেল মোটেলে মানুষের ভীড়

বিজয় দিবসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের মহাসম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:১২ পিএম

বিজয় দিবসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের মহাসম্মেলন

মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী, কক্সবাজার 

 

 

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ছুটি পেয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের মহাসম্মেলন। কক্সবাজারের প্রায় পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল কোথাও রুম খালি নেই। ছুটি পেয়ে ও ছেলে মেয়েদের পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে আসছে কক্সবাজারে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই ৩ মাস কক্সবাজারের পর্যটনের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। বর্তমানে কক্সবাজারে এক লক্ষ দশ হাজারের মতন পর্যটক অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।রাজনৈতিক পরিবেশ ও সব কিছু ঠিক টাক থাকলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটক আগমন অন্য বছরের ছেয়ে আরও বেশি হবে এবং ব্যবসা বানিজ্যও বেশ ভাল হতে পারে বলে মনে করছেন কক্সবাজারের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

 

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের কলাতলী পয়েন্ট গিয়ে দেখা যায় হাজার হাজার পর্যটক সমুদ্রের লোনা জ্বলে গোসল করছেন। মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটক ও স্থানীয়দের উপস্থিতি ছিল চুখে পড়ার মত । সমুদ্রসৈকতের নীল জলরাশি আর সোনালি বালুচরে প্রকৃতিপ্রেমীরা সময় কাটাচ্ছেন মহা আনন্দে। শীতের আমেজ ও ছুটির মেলবন্ধন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে পরিণত করেছে পর্যটকদের মহা মিলনমেলায়।বিজয় দিবসের ছুটির কারণে সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে ইনানী, হিমছড়ি, পাটুয়ারটেক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, দরিয়ানগর, মিনি বান্দরবান খ্যাত গোয়ালিয়া পালং এও রামু বৌদ্ধ মন্দির, ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। 

 

 

 

ঢাকা মিরপুর থেকে আগত পর্যটক মোহাম্মদ রহিম উদ্দীন জানান, বিকালের সমুদ্র সৈকত অনেক সুন্দর দেখা যায় । রাতের সময় আরও মনোমুগ্ধকর। শীতের আবহ সমৃদ্ধ কক্সবাজারের পরিবেশ যে কারোই মন জুড়িয়ে যাবে ।

 

 

সিলেট থেকে আগত পর্যটক মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন , অনেকদিন পর কক্সবাজার এলাম। এবার ট্রেনে চড়ে আসার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। শীতের হালকা আমেজে সৈকতে সময় কাটানো সত্যিই আনন্দদায়ক।

 

খুলনা থেকে আসা নজরুল ও নিহা দম্পতি জানান, সৈকত ছাড়া কক্সবাজারে দেখার মতো তেমন কিছু নেই। এখানে পর্যটন নির্ভর নতুন কিছু হওয়া উচিত। এছাড়া খাবারের দোকানগুলোতে অতিরিক্ত দাম আদায় করা হচ্ছে। 

 

 

কক্সবাজার টুরিস্ট ক্লাবের চেয়ারম্যান এম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান এই মৌসুমী বর্তমানে কক্সবাজারে এক লক্ষ দশ হাজারের মতন লোক অবস্থান করতেছেন প্রায় ৫শতাধিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস কোথাও খালি নেই প্রায় জাগায় মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে । এই মাস ও জানুয়ারিতে পর্যটক আশানুরূপ থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে । আশা করতেছি এই বছর পর্যটকের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক টা বাড়তে পারে। 

 

এম রেজাউল করিম বলেন, একজন পর্যটক চাইলে সীমিত বাজেটের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে যেতে পারেন। 

 

পর্যটন উদ্যোক্তা সাইফুল আলম জানান - এখন সড়ক, বিমান ও রেলপথে পর্যটকরা কক্সবাজারে আসতে পারছেন সহজেই। বিশেষ করে রেলের নতুন সংযোগ এবং রাত ১০টা পর্যন্ত বিমানের ওঠানামা পর্যটনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।

 

 

কলাতলী হোটেল এসএ ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক শহিদুল ইসলাম জানান , শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে ব্যবসায়ীরা এখন আবার ভালোর দিকে যাচ্ছেন ।

 

 

হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এর জিএম রাসেল উদ্দীন বলেন, বর্তমানে পর্যটকদের ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, হোটেলে বুকিং বেশ ভালো আছে । মহান বিজয় দিবসের ছুটির কারণে আমাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হচ্ছে । সামনে আরও ভালো সময় আসবে বলে আশা করা যায় ।

 

 

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানান, সামনে ২/৩ মাস বেশ ভাল ব্যবসা বানিজ্য হবে। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পর্যটকদের পজিটিভ রিভিউ পেতে হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া ও রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা জরুরী । এই জন্যে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। 

 

চৌধুরী আরও জানান, আমাদের দায়িত্ব শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করা নয় বরং এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার উদ্যোগও নিতে হবে। পর্যটন স্পটগুলোর পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 

 

ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন , সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয় । নিয়মিত টহলের পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। 

 

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, সৈকত ও আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী কাজ করছেন । যানজট নিরসনে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ছিনতাই বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। 

 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান,

পর্যটক হয়রানি ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিশেষ টিম কাজ করছে। এছাড়া সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযোগ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে পর্যটকরা যে কোনো সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। 

 

তিনি আরও জানান, আবাসিক হোটেল ও খাবার রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত দাম আদায় করার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। 

 

এদিকে আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর থেকে টানা সাতদিন কক্সবাজারে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিচ কার্নিভাল। সাত দিনব্যাপী এ আয়োজনে থাকবে বর্ণিল আয়োজন।