বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫

ভাসানচর থেকে ক্রমান্বয়ে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:১২ পিএম

ভাসানচর থেকে ক্রমান্বয়ে পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

 

 

কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম

 

প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাওয়ার বাহানা, পড়াশোনা করার আগ্রহসহ নানা কারণে তারা ভাসানচর ছাড়ছেন। নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় সব সময়ই কৌশলে পালিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গারা। পালিয়ে তারা দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে আসছেন বলে জানিয়েছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা।

 

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে কক্সবাজার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে যাওয়া পথে চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে ২৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে কোস্টগার্ডের কাছে দিয়েছেন স্থানীয়রা।

 

কোস্টগার্ড এর হাতে আটককৃত রোহিঙ্গারা হলেন, আলী জহুর (৩৯), সৈয়দা খাতুন (২৮),  শাহীদা (১৮), জান্নাত আরা (১৩), মাজেদা (১১), নুর কিয়াম (০৮), এনামুল হাসান (০৭), মাহমুদুল হাসান (০৬), নূরা ইদ্রীস (০৫), ইয়াসমিন (২ মাস), মো. ফারুক (২৬), শেহেবা বেগম (২৩), বিনাজ বিবি (০৪), মো. ছিদ্দিক (৬৮), রেহেনা বেগম (৫৭), রোমিনা (১৫), আবু বক্কর ছিদ্দিক (০২), মোমিনা (০১), নূর বানু (১৪), ইসমত আরা (১৩), আনোয়ার সাদেক (    ১২), আনোয়ার সালাম (১১), আনোয়ার হোসেন (১০), মো. ফারুক (১৭) ও আব্দুল হাফেজ (১৮)।

 

ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক আলী জহুর (৩৯) বলেন, ২০১৭ সালে আমরা বাংলাদেশে আসি। ওই সময় আমি শরীরে ব্যথা পাই। এরপর আমাদের ভাসানচরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে আমার পাঁচ মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সেখানে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই; কিন্তু ছেলে-মেয়েদের সব প্রয়োজন পূরণ হয় না। যার কারণে আমরা কক্সবাজার ক্যাম্পে চলে যাচ্ছি। কারণ ওখানে আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। মেয়ের স্বর্ণ বিক্রির টাকায় নৌকা ভাড়া করে ভাসানচর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পালিয়ে আসছেন বলে জানান তিনি।

 

এ-ছাড়াও আব্দুল হাফেজ নামে আরেক রোহিঙ্গা কিশোর বলেন, ‘জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আমরা ভাসানচর থেকে বোটে করে পারকিতে এসে নেমেছি। আমি একজন কোরআনে হাফেজ। আমার সাথে ফারুক নামে আরও একজন আছে। সেও কোরআনে হাফেজ। কোনো মাদ্রাসায় পড়াশোনা করার ইচ্ছায় আমরা ভাসানচর থেকে পালিয়েছি। জানা যায়, ভাটা কিংবা শীত মৌসুমে সন্দ্বীপ ও ভাসানচরকে বিচ্ছিন্ন রাখা সরু চ্যানেলটি প্রায় শুকিয়ে যায়। এ সময় হাঁটু থেকে বুকসম পানি পার হয়ে ভাসানচর থেকে সন্দ্বীপে চলে আসেন অনেক রোহিঙ্গা। বিভিন্ন সময় মাছ ধরতে যাওয়া কিছু জেলে ও মাঝি টাকার বিনিময়ে তাঁদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাওয়া বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে পুনরায় ভাসানচরে দিয়ে আসা হয় বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

এ-দিকে পারকি সমুদ্রসৈকত এলাকার বাসিন্দা নুরুল আনোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কিছু লোকজন বোট থেকে নেমে পারকির চরে উঠেন। জামা কাপড় ভেজা দেখে সন্দেহ হওয়ায় তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়। এ সময় তারা প্রথমে নিজেদের কক্সবাজারের বাসিন্দা জানালেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন, তারা ভাসানচর থেকে পালিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছেন। এ সময় খবর দিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’

 

এ-বিষয়ে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহসিন জানান, আটক রোহিঙ্গারা কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। এদের বিষয়ে কোস্টগার্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে।