জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেছে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।
ইসরায়েল এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে আগাম হামলা চালাতে পারে। একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে খবরটি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। বলা হয়েছে, এ আক্রমণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পিছিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে এবং ব্যাপক সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এ হামলা।
হোয়াইট হাউস এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইসরায়েল সরকার, সিআইএ, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এবং ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স অফিসও হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জনের অনুমতি দেবেন না। তিনি ইরান সরকারের সঙ্গে আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী ইস্যুগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চান। তবে ইরান শিগগিরই আলোচনায় বসতে রাজি না হলে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করবেন না ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, জানুয়ারির শুরুর দিকে এ প্রসঙ্গে বেশ বিস্তৃত গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর এটি তৈরি করেছিল। সেখানে সতর্ক করা হয়েছিল যে, ইরানের ফোরডো ও নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার চেষ্টা করতে পারে ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে জড়িত বর্তমান ও প্রাক্তন মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল অক্টোবরে বোমা হামলা চালিয়ে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে এবং অরক্ষিত ইরানে পরবর্তী আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে গত বছর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়েছিল।
মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য দুটি হামলার আভাস দেয়া হয়েছে, যার প্রতিটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশপথে পুনরায় জ্বালানি ভরার সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দিতে হবে।
সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান তিনি। সশস্ত্র সংঘাতের বদলে ইরানও চুক্তি করতে চায় বলেই তার বিশ্বাস।
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, সবাই মনে করছে ইসরায়েল আমাদের সহায়তা কিংবা আমাদের অনুমোদন নিয়ে ইরানের ভেতরে বোমা মেরে তছনছ করে দেবে। আমি চাই না এমনটা ঘটুক।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্ররা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উৎসাহে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে বের করে আনেন এবং ২০১৮ সালে তেহরানের উপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় শুরু করেছে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানুয়ারিতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ইরান, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি জেনেভায় পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করার উপায় খুঁজতে বৈঠক করেছে।