বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। চা-বাগান অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব ভাষা(নাগরি ভাষা) ও নিজস্ব বর্ণমালা। দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান (৯২টি) মৌলভীবাজারে থাকায় এই জেলাকে 'চায়ের রাজধানী' বলা হয়। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার পরেই সবচেয়ে বেশি যে ভাষাটি ব্যাবহৃত হয় সেটি 'দেশওয়ালী ভাষা'। বিশেষ করে চা-বাগান গুলোতে ঢুকলেই এই ভাষার ব্যাবহার দেখা যায়।
তথ্যমতে বাংলাদেশে ৪১টি নৃগোষ্ঠীর ভাষা জীবিত রয়েছে। এদের মাঝে প্রায় ১৪টি ভাষা হারিয়ে যাওয়ার পথে । যার অধিকাংশ ভাষা-ভাষীর মানুষ মৌলভীবাজার জেলায় বসবাস করেন। হারিয়ে যাওয়া ভাষার মধ্যে সবার উপরে দেশওয়ালী ভাষা। এই ভাষাটা অধিকাংশ চা শ্রমিকরা ব্যবহার করেন।
জানা যায়, প্রায় ২শত বছর আগে ভারতের উড়িশা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা বাগানে চা উৎপাদনের জন্য নিয়ে আসা হয় তাদেরকে। তারপর থেকে তারা এখানে বসবার শুরু করে। তাদের সবকিছুর সাথে মিল পাওয়া গেলেও ভিন্নতা শুধু ভাষার দিক দিয়ে। কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যাচ্ছে তাদের এই 'দেশওয়ালী' ভাষা।
এর কারন খুজতে গিয়ে পাওয়া যায় আশ্চর্যজনক কিছু তথ্য। দিন দিন চা-বাগানের মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে, যার ফলে তাদের বাচ্চাদের ছোট থেকেই বাংলা এবং ইংরেজিতে তাদের সাথে কথা বলতেই আগ্রহ দেখাচ্ছে। যখন ছেলে-মেয়ে বড় হচ্ছে তখন তারা এই ভাষা বলতে পারছে না। যুগের সাথে তাল মিলাতেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে এই ভাষা। ধারনা করা হচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে এমন একটি সময় আসবে কেউ এই ভাষায় কথাই বলতে পারবে না।
শতবছর বয়সী যমুনা প্রসাদ বলেন, এখন সবাই নিজ সংস্কৃতি বাদ দিয়ে বাংলা সহ অনান্য ভাষায় কথা বলছে। তবে ভুলে গেলে হবে না, এটা আমাদের সংস্কৃতি । এটাকে ধরে রাখতে হবে।
ভাষা এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণে বছরে দু-একটি উদ্যোগ দেখা যায়। চা শ্রমিকরা মনে করেন আমাদের কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি বিলুপ্ত প্রায় এই ভাষা সংরক্ষণে সরকার যদি কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করে তাহলে এই ভাষাকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
গবেষকদের মতে, চা বাগান গুলোতে বিভিন্ন নিতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বসবাস থাকলেও সংরক্ষণে নেই কার্যকর উদ্যোগ তাই হারিয়ে যাওয়ার আগেই এসব ভাষা সংরক্ষণের দাবী গবেষকদের।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর ঘোষ বলেন, চা শ্রমিক দেশওয়ালীরা বাংলা ভাষা চর্চা করতে গিয়ে নিজস্ব ভাষা হারিয়ে
ফেলছে। তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
জেলা প্রসাশক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, এ নিয়ে আমাদের হাতে তথ্য আসলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় ভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।