কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার মোহরটারি গ্রামে বিরল প্রজাতির একটি শকুন উদ্ধারকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা মাঠের মধ্যে একটি বড় আকৃতির অসুস্থ পাখিকে পড়ে থাকতে দেখে সেটি উদ্ধার করেন।
স্থানীয় কৃষক মামুন মিয়া বলেন, “জমিতে কাজ করার সময় হঠাৎ একটি বড় পাখিকে নড়াচড়া করতে দেখি। কাছে গিয়ে বুঝতে পারি এটি একটি শকুন। পাখিটি উড়তে পারছিল না, তাই আমরা গ্রামবাসীরা মিলে এটিকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসি।”
শকুনটি উদ্ধারের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও বিরল এই পাখিটি একনজর দেখতে আসছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে পাখিটির ছবি ও ভিডিও ধারণ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মোহরটারি গ্রামে এর আগে এমন শকুন দেখা যায়নি।
খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, “শকুনটি সম্ভবত অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত। আমাদের দল শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করছে। প্রয়োজনে চিকিৎসা দেওয়া হবে। শকুনটি সুস্থ হলে এটিকে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।”
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শকুন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ সরিয়ে রোগ ছড়ানো রোধে এই পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এলাকার সচেতন মানুষ প্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা শকুন সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
উদ্ধার ও সংরক্ষণের পরবর্তী পদক্ষেপ পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তায় শকুনটির চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, শকুন সংরক্ষণ প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিবেশ রক্ষা সম্ভব।
উল্লেখ্য -শকুন একটি গুরুত্বপূর্ণ পাখি, যা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করে। তবে বিভিন্ন কারণে এটি বিলুপ্তির পথে।এই বিলুপ্তির কারণ সম্পর্কে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান- ডাইক্লোফেনাক ওষুধের ব্যবহার:
গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ডাইক্লোফেনাক ওষুধ শকুনের জন্য বিষাক্ত। এই ওষুধ খাওয়ার ফলে শকুনের কিডনি নষ্ট হয়ে যায় এবং তারা দ্রুত মারা যায়।এছাড়াও
মৃত প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং পশুর মৃতদেহ সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করার কারণে শকুনের খাদ্য সরবরাহ কমে গেছে।
অভিজ্ঞজন জানান,বন উজাড় এবং শহরায়নের ফলে শকুনের প্রাকৃতিক আবাসস্থল কমে গেছে।তাছাড়া মৃত প্রাণীর দেহে বিষ প্রয়োগ (যেমন, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার) শকুনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
কিছু অঞ্চলে শকুনকে শিকার বা তাদের দেহাংশের জন্য হত্যা করা হয়।
শকুন বিলুপ্তির ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
শকুন মৃত প্রাণীর দেহ ভক্ষণ করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাদের অনুপস্থিতিতে মৃতদেহ পচে গিয়ে রোগজীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে। মৃত প্রাণীর দেহে জন্মানো ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।অপরদিকে,কুকুর এবং ইঁদুরের মতো প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যারা মৃত প্রাণীর দেহ খায়। এর ফলে রেবিস বা প্লেগের মতো রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।শকুন খাদ্যশৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের বিলুপ্তি প্রাকৃতিক শৃঙ্খলে অসামঞ্জস্য তৈরি করে।