সামনে ইরি বোরো মৌসুম। ধানের ভাল বীজতলা না হলে ফসল উৎপাদন কম হয়। তাই শীতের মৌসুমে বীজতলা নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তায় কাটে। কখনো ঘন কুয়াশা নয়তো শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হয় বীজতলা। ফলে প্রভাব পড়ে বীজ তলায়।এই পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে‘ট্রে’ পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস । ইতোমধ্যে সমলয় পদ্ধতিতে ট্রে' বীজতলা পদ্ধতি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে ।কম খরচে ট্রে পদ্ধতিতে সুস্থসবল বীজতলা ও চারা তৈরিসহ অধিক ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতিতে কৃষকেরা চাষাবাদও শুরু করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,হোসেনপুরের পুমদী ইউনিয়নের দক্ষিণ চর পুমদী গ্রামে প্রচলিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে এটিকে ‘সমলয়’ পদ্ধতি বলে। এ পদ্ধতির ফলে ধান চাষাবাদে শ্রমিক সঙ্কট নিরসন, উৎপাদনে অতিরিক্ত খরচ ও সময় বাঁচবে বলে জানা গেছে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রাথমিকভাবে উপজেলার চর পুমদী এলাকায় প্রায় ১২শতক জমিতে ১০০০ প্লাস্টিকের ট্রেতে ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা রোপণের বিষয়টি এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে বেলে মাটিতে জৈব সার সংমিশ্রণে প্লাস্টিকের ট্রেতে ধান বীজ বপন করা হয়। ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে এই বীজ চারা রোপণের জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। এতে করে বাড়তি সারের প্রয়োজন হয় না। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির পরিমাণও কম লাগে। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার মেশিন দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে চারা রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে এবং একসঙ্গে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। প্রচলিত পদ্ধতিতে চারা রোপণের পর ফসল ঘরে তুলতে ১৪৫ থেকে ১৬০ দিন সময় লাগলেও সমলয় পদ্ধতিতে এর থেকে সময় কম লাগবে ।
সমলয় পদ্ধতির ব্যাপারে দক্ষিণ চর পুমদী এলাকার বর্গাচাষি আ:হামিদ বলেন, আগে জমি তৈরি করে ধানের বীজ লাগাই ছিলাম। এবার মেশিনের সাহায্যে ট্রেতে বীজ তলা তৈরি করা হয়। এভাবে কখনো আবাদ করিনি। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ১২ শতক জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ধান চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি, আশা করি ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
একই এলাকার কৃষক কাজল মিয়া, দ্বীন ইসলাম, হাফিজ উদ্দিন ,বাদল মুন্সি, ফারজুল, আব্দুল মন্নাছ জানান, সমলয় পদ্ধতিতে বীজ বপন করেছি। খরচ নেই বললেই চলে। সারের ব্যবহার করা হয়নি। এত শীতের মধ্যেও বীজতলার কোনো ক্ষতি হয়নি। আশা করি এবার এ পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
উপজেলার পুমদি ইউনিয়ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলীমুল সাহান বলেন, এ বছর দক্ষিণ পুমদি গ্রামে ৩৫ হেক্টর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হবে।কৃষকদের শ্রমিকের অপেক্ষায় না থেকে যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রের মাধ্যেমে চারা রোপণ ও কর্তন করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।
বোরোর বীজতলা ট্রে পদ্ধতিতে করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হবে না। ট্রে পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হবে। চাষাবাদে ফলন বেশি পাওয়া যাবে। ট্রেতে বীজতলা তৈরির কারণে বীজের কোনো ক্ষতি হবে না বা কোনো বীজ নষ্ট হবে না। কৃষকের শ্রমিক-সংকট নিরসন হবে। সঙ্গে খরচও কমবে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
ট্রে নির্ভর চাষাবাদ শুরু হলে শ্রমিক-সংকট নিরসনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে, সঙ্গে কৃষক লাভবান হবে। এতে শ্রমিক লাগবে না সব যন্ত্রের মাধ্যমে হবে। এ ছাড়া দ্রুত উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তারা। সমলয় পদ্ধতি চাষাবাদে কৃষকরা লাভজনক হবে বলেও আশা করেন তিনি।