বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৫

চোখ বন্ধ পুলিশের, চট্টগ্রামে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়  

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম

চোখ বন্ধ পুলিশের, চট্টগ্রামে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়   

কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম

 

পুলিশের নির্দেশনা যে লাউ, সেই কদু। প্রতিবছরের মতো এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ফানুস না উড়াতে এবং আতশবাজি না ফুটাতে নির্দেশনা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কে শুনে কার কথা।

 

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপির পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দিয়ে জারি করা হয়েছিল থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষের করণীয়-বর্জণীয়গুলো। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল সকল প্রকার গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে পার্টি, আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস উড়ানোর ওপর। কিন্তু রাত ১২টা বাজতে না বাজতেই শহরজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক শব্দে আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ফানুস উড়ানো। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা থেকেই প্রকট আওয়াজে চলে ডিজে অনুষ্ঠান।

 

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার পরপরই নগরের আকাশজুড়ে আলোর ঝলকানি শুরু হয়। সঙ্গে যোগ হয় পাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের আতঙ্ক কানফাটানো আতশবাজি-পটকার শব্দ।

 

সরেজমিনে নগরের অলংকার এলাকার একটি বাড়ির ছাদে উঠে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁতেই রঙ-বেরঙের আতশবাজির ঝলকানিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের আকাশ। একযোগে বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ছাদ থেকে পোড়ানো শুরু হয় আতশবাজি। পাশাপাশি পটকার শব্দে প্রকম্পিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, খুলশী, আকবর শাহ, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বন্দর ও পতেঙ্গাসহ প্রায় সব এলাকাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফুটানো হয়েছে আতশবাজি, পটকা। কিছু কিছু স্থানে উড়ানো হয়েছে ফানুসও। এসময় নগর পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়ার পরও আইন মানাতে নগরবাসীর কাছে অসহায় অবস্থায় থাকে দেখা যায়।

 

এদিকে, আতশবাজি ও বাজির কানফাটা শব্দের আওয়াজে সদ্যোজাত শিশু সন্তানকে নিয়ে অনেক মা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রাত পার করছেন। শিশু ছাড়াও এই শাব্দবোমার অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি বৃদ্ধ, এমনকি রোগীরাও। 

 

এখানেই শেষ নয় অনেকে পুলিশি সহায়তা চেয়েও পাননি এমন অভিযোগও রয়েছে। কয়েকটি সরকারি অফিসেও চলে থার্টিফার্স্ট নাইটের নানা আয়োজন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের শহরজুড়ে চলে এক অন্যরকম আয়োজন।

 

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে সিএমপি’র মিডিয়া সেল থেকে গত দু’দিন আগে জানানো হয় কঠোর বার্তা। যাতে বলা হয়, ‘৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১ জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের অসন্তোষ সৃষ্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

 

বাজি ফুটানোর নির্দেশনা কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে নগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) রইছ উদ্দিন বলেছিলেন, ‘বিস্ফোরণ আইন অনুযায়ী আতশবাজি-পটকা এমনিতেই নিষিদ্ধ। আমরা নির্দেশনা দেওয়ার পর আইনটা মানার দায়িত্ব জনগণের। এই আতশবাজি অনেক দুর্ঘটনারও জন্ম দেয়। জনগণের সচেতনতা না থাকলে আইন দিয়ে সবকিছু সমাধান করা সম্ভব নয়।

 

এসময় তিনি আরও বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে নগরের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন, গীর্জা, হোটেল, ক্লাব, বিনোদনকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন, টহল জোরদার, ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছিলো। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

 

এছাড়া যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ/দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য তৎক্ষণাৎ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম অথবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ জানাতে অনুরোধ করা হয়। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর: ০৩১-৬৩৯০২২, ০৩১-৬৩০৩৫২, ০৩১-৬৩০৩৭৫, ০১৬৭৬-১২৩৪৫৬, ০১৩২০-০৫৭৯৯৮।