বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৫

খেলার মাঠে 'মেলা' সিলেট শহরে উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম

খেলার মাঠে 'মেলা' সিলেট শহরে উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

 

সিলেটছ খেলার মাঠে মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জে চলছে আলোচনা সমালোচনা। শহরের ষোলঘর স্টেডিয়াম মাঠে মাসব্যাপী শিল্প বাণিজ্য মেলার আয়োজন বন্ধে লাগাতার আন্দোলন করছেন স্থানীয় লোকজন, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, স্মারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে খেলার মাঠে মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসলেও অদৃশ্য শক্তির সমর্থনে মেলা আয়োজনে মাঠ প্রস্তুত করছে বাস্তবায়নে থাকা ‘বাংলাদেশ মুসলিন বেনারসি এন্ড জামদানি সোসাইটি’ নামের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। ফলে এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

 

এদিকে, ক্রীড়ানুরাগী ও এলাকাবাসীর দাবীকে উপেক্ষা করে মেলার অনুমোদনসহ যাবতীয় সহযোগিতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। মাসব্যাপী শিল্প পণ্য মেলা আয়োজনের সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

 

খেলার মাঠে মেলা নয়’ এই দাবিতে ২২ ডিসেম্বর ষোলঘর স্টেডিয়াম মাঠে মানববন্ধন করে এলাকার খেলাপ্রেমী জনতা। পরদিন মেলার অনুমতি না দিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপির প্রদান করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্মারকলিপি প্রদানের পরদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার ভিত্তিপ্রস্তরের উদ্বোধন করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এলাকাবাসীর দাবিকে বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শন করে খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করার প্রতিবাদে ২৬ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন এলাকায় বসবাসরত আইনজীবীরা। ২৭ ডিসেম্বর বাদ জুম্মা ষোলঘর স্টেডিয়াম মাঠ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ তৌহিদী জনতা। এছাড়াও মেলাবন্ধের দাবিতে শহর জুড়ে মাইকিং করে প্রচার অভিযান করেন শহরের ক্ষুদ্র মাঝারি ধরণের ব্যবসায়িরা।

 

আন্দোলনকারীরা জানান, একটি জনবহুল আবাসিক এলাকায় মেলা আয়োজনের কোনো বিধিবিধান না থাকলেও প্রতিবছর খেলার মাঠে মেলা আয়োজন করা হয়। এতে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা ও শরীরচর্চা থেকে বঞ্চিত হয়। মেলার মাইকের উচ্চ শব্দের কারনে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। সাকার্স ও বাইক রার্ডিংসহ বিভিন্ন ইভেন্টের শব্দ দূষণে অসুস্থ বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট হয়। এছাড়া অশ্লীল নাচগানের মাধ্যমে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার কথা জানান এলাকাবাসী।

 

ষোলঘরের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মতিয়া বেগম বলেন, ‘মেলা অয়োজনের কথা শোনার পর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি। মেলার কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে পারে না। শহরে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে। একটি আবাসিক এলাকার মানুষ মেলার জন্যে অতিষ্ঠ থাকে। আমরা চাই না খেলার মাঠে মেলা হোক।’

 

সজিব আহমদ নামের এক ক্রীড়ামোদি জানান, শহরে বিকল্প কোনো খেলার মাঠ নেই। এই ষোলঘর মাঠে কয়েক পাড়া মহল্লার ছেলেরা খেলাধুলা করেন। এই মেলা আয়োজন হলে আমরা খেলাধুলা কোথায় করবো।

 

সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেপু বলেন, এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি খেলার মাঠে যেন মেলা আয়োজন না করা হয়। দাবি আদায়ে এলাকাবাসী রাজপথে। কিন্তুপ্রশাসন এলাকাবাসীর দাবির প্রতি সম্মান না জানিয়ে মেলার অনুমোদন দিয়েছে। এটি কখনোই কাম্য নয়। আমরা চাইবো অচিরেই যেনো মেলার আয়োজন বন্ধ করা হয়।

 

এদিকে খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী যুবলীগ নেতা মঈন খান বাবলুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ মসলিন বেনারসি এন্ড জামদানি সোসাইটি’কে। ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ব্যক্তিকে মেলা আয়োজনের দায়িত্ব দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা।

 

খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে বাংলাদেশ মসলিন বেনারসি এন্ড জামদানি সোসাইটির চেয়ারম্যান মঈন খান বাবলু বলেন, সকল ধরণের আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। মেলা আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ।

 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, এলাকাবাসী বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন আমরা তাদের বিষয়টাও দেখবো। মেলায় যাতে উচ্চ শব্দে গানবাজনা না করা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শিশুদের খেলাধুলার জন্যও জায়গা রাখা হবে বলে জানান তিনি।