দেশের সাইবার নিরাপত্তা কাঠামোকে শক্তিশালী করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা বাড়ানো এবং নাগরিকদের অনলাইন হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রণীত নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন হাতিয়ার। এটি জুলাই গণঅভ্যূত্থানের সাথে বিশাল বিশ্বাসঘাতকতা। এই অধ্যাদেশে জনগণের মৈলিক মানবাধিকারের বিষয়সমূহ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তাড়াহুড়া করে আগের আইনের নানা বিতর্কিত ধারা বহাল রেখে নতুন কিছু জিনিস যুক্ত করে একটি জগাখিচুড়ি অধ্যাদেশ তৈরী করা হয়েছে। শনিবার রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ‘ভয়েস ফর রিফর্ম’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪: রাষ্ট্রীয় নিবর্তন ব্যবস্থা বহাল ও গণঅভ্যূত্থানের প্রতি অবজ্ঞা’ শিরোনামে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্ল্যাটফর্মটি।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতির সংস্থার বিভিন্ন মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট কনভেনশনে বাংলাদেশ সাক্ষর করেছে। এই আইনের বেশ কিছু ধারা সেগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক।
মানবাধিকার বিষয়ক আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, নারী ও শিশুসহ যাদের সুরক্ষার জন্য এই আইনে নতুন কিছই ধারা যুক্ত করা হয়েছে তাদের সাথেই কোনো কথা বলা হয়নি নতুন এই অধ্যাদেশটি তৈরী করার সময়।
রাজনীতিবিদ দিদারুল আলম অভিযোগ করেন, আগের সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়ে যেসকল ব্যক্তির বিরদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে তার বেশিরভাগই এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি, যদিও অনেক উপদেষ্টা ও বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আমলারা সরকারকে ভুল পথে পরিচালিত করছে বলেই এরকম বাজে ও গণবিরোধী একটি অধ্যাদেশ সামনে আনা হয়েছে।
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর বলেন, এই অধ্যাদেশের সবচেয়ে বড় খারাপ দিকটা হচ্ছে পুলিশের হাতে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারি ক্ষমতা দেওয়া। এর মাধ্যমে পুলিশকে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে সাধারণ জনগণকে হয়রানির জন্য ও চাঁদাবাজির করার। এছাড়া পুলিশ ইচ্ছা করলেই যে কারো মোবাইল তল্লাশি করতে পারবে যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতার লঙ্ঘন।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম বলেন, কয়েক হাজার জীবনের বিনিময়ে যে পরিবর্তন এসেছে ও তার ধারাবাহিকতায় যে নতুন সরকার এসেছে, তাদের কাছ থেকে এরকম একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অধ্যাদেশ কোনোভাবেই আশা করা যায় না। কোনোভাবেই এই অধ্যাদেশ চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন করা যাবে না। মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সকল নাগরিকের মতামত নিয়ে নতুন করে সাইবার জগতে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা অধ্যাদেশ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। খসড়া অধ্যাদেশটি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের দিদারুল আলম ভূঁইয়া, রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজ, ই-আরকির প্রধান সিমু নাসের, টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাবহানাজ রশীদ দিয়া প্রমুখ।