রাজনগরে বোরোধানের বাম্পার ফলন
শিলাবৃষ্টির আশংকায় দুশ্চিন্তায় কৃষক
রাজনগর প্রতিনিধি :
রাজনগরে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ঘরে তুলবেন- এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,রাজনগর উপজেলার ফতেপুর,উত্তরভাগ,মুন্সিবাজার,পাঁচগাও,রাজনগর,মনসুরনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠে এবার বোরো ধান কাটার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উপজেলার কাউয়া দীঘি হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে গত বছর থেকে হাওরাঞ্চলে শ্রমিক সংকট কমেছে । কাউয়া দীঘি হাওরের বেশীরভাগ কৃষকরা কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রুত কেটে ফেলছেন। প্রান্তিক চাষিরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করা শুরু করেছেন। কৃষকের বাকি ধান হাওরের জমি ও বাড়ির আঙ্গিনা থেকেই ফোরিয়া এবং দালালরা নগদ ও বাকি দরে কিনে নিচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চৈত্র মাসের অতি খরা,ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ, ব্লেস্ট রোগ ও কিছুটা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এখন আবার কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশংকার ফলে বোরো ধানের ফলন ঘরে তুলা নিয়ে কৃষক-কৃষানীরা দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কাউয়া দীঘি হাওরে ১৪ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এবছর উন্নত জাতের ধান চাষ বেশী হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল ধানের মধ্যে হাইব্রিড, হিরা, ১, ২, ৩, এসইএলএইট, উপসী জাতের মধ্যে বি-৮৯, ৯২, বিধান ৮৮ ধানসহ স্হানীয় জাত ও দেশীয় জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। স্হানীয় জাতের মধ্যে আটাশ,উন্নত্রিশ,বঙ্গবন্ধু, দেশীয় জাতের মধ্যে রয়েছে ইরি, সাইল, নাজির সাইল, লাখাই, চিনি গুড়া, বিরুইন । অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের পরিচর্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জমির ধান পাকতে শুরু করেছে । এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এবার প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন ধান উৎপাদিত হবে। ইতোমধ্যে মাঠ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আশা করা হচ্ছে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে।
উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মো: আনছার মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি পঁচিশ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শে তার জমিতে এবার ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু তিনি ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। একই ব্যক্তিকে একাধিক ধান কাটার মেশিন দেওয়া নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের উপর তাঁর এই ক্ষোভ।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কৃষক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ধান আবাদে সেচের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে ফলন বাম্পার হয়েছে। আমার জমিতে ধান কাটা শুরু করেছি। আশা করছি ঝড়-বৃষ্টি না হলে আগামী ছয় - সাত দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারব। শুনেছি বাজারে দাম ভালো। আশা করছি এবার লাভ বেশী হবে।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমীন বলেন, উপযুক্ত সময়ে কৃষকরা জমিতে ধান রোপণ করার পাশাপাশি জমিতে সেচসহ পরিচর্যা করেছেন। তা ছাড়া আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে কাজ করছেন। কৃষকদের সব বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। একই ব্যক্তিকে একাধিক ধান কাটার কম্পেইন হারভেস্টার মেশিন দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,আমরা এরকম কোন সুপারিশ করিনি।
রাজনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা, দীহি রাজ নন্দী চৌধুরী বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধানের মূল্য ৩৬ টাকা কেজি দরে ১৪৪০ টাকা মন ধার্য্য করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য গুদামের জন্য ১২০০ কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে। প্রত্যেক কৃষক ৩ টন পর্যন্ত খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্যে পান এবং কোন ধরনের হয়রানীর শিকার না হন সে বিযয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি নিয়ে কৃষকরা ফোরিয়া বা দালাল দ্বারা হয়রানীর শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগ আসলে যথাযত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।