হাসান সৈকত, চট্টগ্রাম
নানা অপকর্ম-অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা যায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালকে। অভিযোগের শেষ নেই হাসপাতালটির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছে। ফলপ্রসূ এতো এতো রোগী, বিশাল ফান্ড থাকার সত্ত্বেও হাসপাতালের কোন উন্নতি চোখে পড়ছে না।
এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে হাসপাতালের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের তারিখ। আগামী ২১ ডিসেম্বর হাসপাতালের সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এই নির্বাচন নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। হাসপাতালের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে পড়ছে একের পর এক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। তবে এতো এতো অভিযোগের পরও নিশ্চুপ হাসপাতালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরী।
এদিকে হাসপাতালের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে ভোটার তালিকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও জটিলতার কারণে নির্বাচন বাতিলের আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল রক্ষা পরিষদের আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর হাতে একের পর এক প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। এরপরও তিনি এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি।
হাসপাতাল রক্ষা পরিষদের আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান বলেন, হাসপাতালের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছে। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর। ভোটার তালিকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন যাতে তারা ছাড়া অন্য কেউ নির্বাচিত হতে না পারে।
আহবায়ক মো. ফজলুর রহমানের দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাসপাতালের এই ত্রিবার্ষিক নির্বাচনের ভোটার তালিকায় রয়েছে মৃত ব্যক্তির নামও। ভোটার তালিকার ৭৯০৮ ক্রমিকের মৃত কামাল উদ্দিন ও ৭৯৮৩ ক্রমিকের মৃত শামসুল আলম। এদের মধ্যে মৃত কামাল উদ্দিন বর্তমান নির্বাহী কমিটির ট্রেজারার এস. এম. কুতুব উদ্দিনের খালু। এছাড়াও মৃত শামসুল আলম মোরশেদ-আজাদ প্যানেলের মেম্বার পদে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী তরিকুল ইসলাম তানভীরের পিতা।
এছাড়াও ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে ছবি, মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা বিহীন ভোটাদের নাম। যাদের অনেককেই ভুয়া ভোটার বলে দাবি করছেন এই আহবায়ক। এ বিষয়ে আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান বলেন, অসংখ্য ভোটারের নাম মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা ও ছবি নেই। এই ভোটারদেরকে কিভাবে শনাক্ত করা হবে? এরা যে অন্যকেউ এসে ভোট যে দিয়ে যাবে না এই নিশ্চয়তা কে দিবে?
এদিকে ভুয়া ভোটারদের পাশাপাশি অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের ছাড়াছড়িতে মা ও শিশু হাসপাতাল। হাসপাতালের গঠনতন্ত্রের ৫ ধারায় উল্লেখ আছে, সদস্য হতে হলে নূন্যতম ১৮ বছর এবং এইচএসসি পাশ হতে হবে। ভোটার তালিকায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ও এসএসসি পাস করে নাই এমন অনেক ভোটার আছেন। সদস্য নং ৬৭৭০, ৬৭৭৪, ৬৭৭৫, ৬৭৭৭-৬৭৮৯ অপ্রাপ্তবয়স্ক। তবে এতো কিছু জেনেও না দেখার ভান করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরী।
এছাড়াও হাসপাতালের ভোটার তালিকায় রয়েছে অফিসের পিয়ন, কাজের বুয়াসহ অসংখ্য ভুয়া সদস্য। এ নিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। নাম মাত্র বেতনে যার সংসার চলে, সে পিয়ন কিভাবে ৫ লক্ষ টাকা নগদ ডোনেশনে সদস্য হয়! এই টাকার উৎস কি তা জানতে আগ্রহী অন্যান্য সদস্যরা। এ যেন রুপকথার গল্পকেও হার মানায়। এই ঘটনার প্রকৃত সত্যতা বের করতে এবং হাসপাতালটিকে রক্ষা করতে কঠোর তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন অন্যান্য সদস্যরা।
এদিকে হাসপাতালের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ কোন প্রকার ডোনেশন প্রদান না করেই ডোনার মেম্বার হওয়া। আহবায়ক মো. ফজলুর রহমানের দেওয়া অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে, ডোনার মেম্বার নং ২৭৯ আব্দুল আক্কাস সানি, ২৮০ লায়ন এস.এম কুতুব উদ্দিন (বর্তমান জয়েন্টে ট্রেজারার) ও ২৮১ এসএম গিয়াস উদ্দিন এই তিনজন জরিনা মজিদ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ডোনেশন বাবদ এম্বুলেন্স ও অন্যান্য ডোনেশন দেখিয়ে ডোনার মেম্বার হয়েছেন। অনুরূপভাবে বর্তমান ইসি তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে মেঘা ডোনারদের ডোনেশনের টাকায় মেম্বার করেছেন।
আহবায়ক মো. ফজলুর রহমান বলেন, এই অনিয়ম ও গোজামিলের ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ পুনরায় নির্বাচিত হবে এবং হাসপাতালটি এক সময়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মোরশেদ বলেন, তোড়জোড় ভাবেই চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। কোন অনিয়ম-দুর্নীতি নেই। আশা করছি একটা ভালো ফলাফল আসবে।
তবে এতো অনিয়ম-দুর্নীতি জানার পরও কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, এই ব্যাপারে জানতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নূরীর মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্বভ হয়নি।
তবে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে হাসপাতালের বর্তমান কমিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি কামরুন্নাহার দস্তগীর বলেন, একটা সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। একশ্রেণির মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালাচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে কোন দুর্নীতি নেই।